Tuesday, May 29, 2018

ভারতে রাজনীতি ও নির্বাচন খুব প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়ে গেছে।

ভারতে কি ঘুষ দিয়ে ভোট কেনা যায়? ভোটাররা কি দেখে ভোট দেন?

ভারতে একজন ব্যক্তি কাকে ভোট দেবেন তা কিসের উপর নির্ভর করে? প্রার্থীর পরিবার, পরিচয়, আদর্শ, জাতিগত পরিচয়, নাকি দক্ষতা?
তবে ভোটের সময় ভারতের প্রার্থীরা মানুষজনকে নাকি প্রচুর ঘুষ দেন। বিশেষ করে দরিদ্র ও বিপদগ্রস্ত লোকজনকে টাকা দিয়ে ভোট কেনা হয়।
এই সেদিনই দক্ষিণের প্রদেশ কার্নাটাকায় ভোটের আগে কর্তৃপক্ষ দুই কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ এবং নানা উপহার সামগ্রীর হদিস পেয়েছে।
বলা হচ্ছে এটা নাকি আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। এমনকি ভোটকে কেন্দ্র করে ব্যাংকে অর্থ লেনদেন হয়েছে।প্রার্থী জিতে গেলে আরো জুটবে এমন প্রতিশ্রুতিও ছিল বলে রিপোর্ট বের হয়েছে।উপহার সামগ্রীর মধ্যে মদের বোতল বেশ উল্লেখযোগ্য। পাড়ার কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে এসব বিলি করা হয়।ভোটার প্রতি বেশ ভালই খরচ করেন প্রার্থীরা। অনেক ক্ষেত্রে ভোটার প্রতি এক হাজার রুপির হিসেবও পাওয়া গেছে।বলা হচ্ছে ঘুষ দিয়ে ভোট কেনার প্রবণতা ভারতে বেশি কারণ সেখানে রাজনীতি খুব প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়ে গেছে।১৯৫২ সালে যেখানে ভারতে রাজনৈতিক দল ছিল ৫৫ টি, ২০১৪ সালে দেখা গেছে সেই সংখ্যা বেড়ে এখন ৪৬৪।ইদানীং সেখানে নির্বাচনে আগের থেকে অনেক বেশি অনিশ্চয়তা থাকে।কোন একক দলের আগে যেমন ভোট নিশ্চিত থাকতো এখন আর তা নেই।কিন্তু নতুন এক গবেষণা বলছে, ঘুষ দিয়ে আসলে ভোট কেনা যায়না।যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ডঃ সায়মন শোশা তেমনটাই বলছেন।
তিনি ও তার সহযোগীরা ভারতের ২০১৪ সালের বিধানসভা নির্বাচন ও মুম্বাইয়ে ২০১৭ সালের একটি পৌরসভা নির্বাচন সম্পর্কে প্রচুর তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন।নানা দলের কর্মীদের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। তারা এমন তথ্যও পেয়েছেন যাতে দেখা গেছে যে প্রার্থী সবচাইতে বেশি খরচ করেছেন তিনি চতুর্থ হয়েছেন।দলগুলোর কর্মীরা জানিয়েছে ঘুষ হয়ত অল্প কিছু লোকের ভোট প্রভাবিত করে। জয়ের জন্য অর্থ দিয়ে অনেক বেশি ভোট কেনা যায়না।তাছাড়া ঘুষের টাকা প্রায় ক্ষেত্রেই ভোটার পর্যন্ত পৌঁছায় না।যাদের বিলি করার দায়িত্ব দেয়া হয় তাদের পকেটেই চলে যায় অনেক টাকা।আবার ঘুষ নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করার প্রবণতাও রয়েছে।ভোটারদের আচরণ পর্যবেক্ষণ করা জটিল হয়ে পড়েছে দলগুলোর জন্য।
তবে ডঃ শোশা বলছেন, ঘুষ একদম কাজে আসে না তাও নয়। না দিলে অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে। অন্তত কোনও প্রার্থীকে হয়ত সেইসম্ভাবনা থেকে বাঁচিয়ে দেয়।দিল্লি ভিত্তিক একজন রাজনীতির বিশ্লেষক সনজয় কুমার বলছেন, বেশিরভাগ দল মনে করে যেসব ভোটাররা সিদ্ধান্তহীনতায়ভুগছে তাদের হয়ত ঘুষ দিয়ে প্রভাবিত করা যায়।কিন্তু আসলে তার কোন প্রমাণ নেই।নির্বাচনে ভোটারকে ঘুষ দেয়ার সাথে সাংস্কৃতিক কোন বিষয় থাকতে পারে বলেও মনে করা হয়।দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দরিদ্র মানুষজন ধনীদের প্রার্থী হিসেবে পছন্দ করে।আর ভারতে পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক নৃবিজ্ঞানী আনাস্তাসিয়া পিলাভস্কি রাজস্থানের গ্রামাঞ্চলে ভোটের ধরন নিয়ে গবেষণা করেছেন।সেখানে মানুষজন প্রার্থীর কাছ থেকে ভোজ বা উপহার আশা করেন।আনাস্তাসিয়া পিলাভস্কি বলছেন, গ্রামীণ ভারতে প্রথা ও রীতিনীতির উপরে ভোটের অনেক কিছু নির্ভর করে।রাজা ও প্রজার সম্পর্কের ধারনা দিয়ে এখনো সেখানে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতার ব্যবহার হয়।সেখানে নির্বাচন কমিশন বা পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টির অগোচরেই থেকে যায় ভোজকে কেন্দ্র করে কিভাবে ভোটারকে টোপ ফেলা হয়।তবে লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সের মুকুলিকা ব্যানার্জি বলছেন, দরিদ্র ভোটাররা সকল প্রার্থীর কাছ থেকে অর্থ বা উপহার নেন।
কিন্তু ভোট দেন হয়ত সম্পূর্ণ অন্য কোন কারণে।ভারতের রাজনীতিবিদরাও সেটা জেনে শুনেইটাকাখরচকরেন।একজনবিজেপিরনেতাবলছিলেন, টাকা ঢালার বিষয়টা হল মোটরসাইকেলে তেল ভরার মতো।যদি তা না ভরেন তাহলে কোথাও পৌঁছাতে পারবেন না।কিন্তু বেশি তেল ভরলেআগে যাওয়া যাবে এমনটাও নয়।তাই ঘুষ বিষয়টা ভারতের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে হয়ত থেকেই যাবে।

 

No comments:

Post a Comment